মৌলিক বল: যে সকল বল মুল বা স্বাধীন অর্থাৎ যে সকল বল অন্য কোন বল থেকে উৎপন্ন হয় না বা অন্য কোন বলের রুপ নেয় না বরং অন্যান্য সকল বল থেকে এই বলের রুপের প্রকাশ পায় তাকে মৌলিক বল বলে।
চারটি মৌলিক বল হলো:
ক. মহাকর্ষ বল: ভরের কারনে এই মহাবিশ্বের কোন দুটির বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষন বলকে মহাকর্ষ বল বলে। কোন বস্তুর ওজন হচ্ছে মহাকর্ষ বলের ফল শৃুতি। যদিও স্থুল বস্তুকনার মধ্যকার মহাকর্ষ বল খুবই গুরুত্বপুর্ণ হতে পারে। কিন্তু চারটি মৌলিক বলের মধ্যে মহাকর্ষবল হচ্ছে দুর্বলতম বল। এ কথাটি প্রযোজ্য হয় মৌলিক কনাগুলোর পারস্পরিক বল বিবেচনা করে। তাদের আপেক্ষিক সবলতার বিচারে। যেমন কোন হাউড্রোজেন পরমানুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের মধ্যকার মহাকর্ষ বল হচ্ছে- ৩.৬*১০-৪৭ নিউটন। মহাকর্ষ বল একটি সার্বজনীন বল। এই মহাবিশ্বের প্রত্যেক বস্তু অন্য বস্তুর কারনে এ বল অনুভব করে। এ বলের পাল্লা হচ্ছে অসীম। ভুপৃষ্টের সকল বস্তই পৃথিবীর কারনে এবল অনুভব করে। মহাকর্ষবল সুনির্দিষ্ট পৃথিবীর চারিদিকে চাদের বা বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহের ঘুর্ণন, সুর্যের চারিদিকে পৃথিবীর বা বিভিন্ন গ্রহের গতিকে নিয়ন্ত্রন করে। নক্ষত্র, গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপুন্জ গঠনে মহাকর্ষ বল গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে। গ্রভিটন নামে এক প্রকার কনিকার বিনিময়ের ফলে এই বলের উদ্বব হয়।
খ. তাড়িৎ চৌম্বক বল: দুটি আহিত কনা তাদের আধানের কারনে এক অপরকে যে আকর্ষন বা বিকর্ষন বল প্রয়োগ করে তাকে তাড়িতচৌম্বক বল বলে।তড়িৎ বল এবং চৌম্বক বল এক অপরের সাথে জড়িত। যখন দুটি আহিত কনা স্তির থাকে তখন তাদের উপর তড়িৎ বল ক্রিয়া করে। যখন আহিত কনাগুলো গতিশীল থাকে তখনকার একটি অতিরিক্ত বল হচ্ছে চৌম্বক বল। সাধারন এদর মধ্যে তড়িৎ প্রভাব ও চৌম্বক বল বিরাজ করে বলে এদেরকে তড়িৎ চৌম্বক বল বলে। মহাকর্ষ বলের ন্যায় তড়িৎ চৌম্বক বলের পাল্লাও অসীম। তবে এই বলে ক্রিয়ার জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়না। তাড়িতচেীম্বক বল মহাকর্ষ বলের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। দুটি প্রোটনের মধ্যকার তাড়িতচৌম্বক বল এদের মহাকর্ষ বলের চেয়ে ১০ ৩৬ গুন শক্তিশালী। আমরা জানি ইলেকট্রন প্রোটন ও ইলেকট্রন নামক আহিত কনা দ্বারা গঠিত। যেহেতু তাডিতচৌম্বক বল মহাকর্ষ বলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী তাই পারমানবিক ও আনবিক ক্ষেত্রের সকল ঘটনা একই বল দ্বার নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্য দুটি বল কেবলমাত্র নিউক্লিয় বলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই বলা যায় অনুপরমানুর গঠন, রাসায়নিক বিক্রিয়া, পদার্থের তাপীয় ধর্ম তাড়িতচৌম্বক বলের ফল। ফোটন নামক এক প্রকার কনার পারস্পরি বিনিময়ের ফলে এই বল কায্যকর হয়।
গ. সবল নিউক্লিয় বল: পরমানুর নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয় উপাদান সমুহকে একত্রে রেখে যে শক্তিশালী বল ক্রিয়া করে তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। সবল নিউক্লিয় বল প্রোচন ও নিউট্রনকে নিউক্লিয়াসে একত্রে আবদ্ধ করে রাখে। কোন ধরনের আকর্ষনীয় বল না থাকায় প্রোটনের মধ্যকার বিকর্ষনীয় বলের কারনে নিউক্লিয়াস অস্থিতিশীল হয়ে যেতো। নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের জন্যই একটি নতুন বলের উদ্ভব হয় আর সেই বলই হচ্ছে সবল নিউক্লিয় বল। যা সকল বল গুলার মধ্যে এই বল সবচেয়ে শক্তিশালী। তাড়িতচৌম্বক বল থেকে এটি প্রায় ১০০ গুন শক্তিশালী। এটি আধান নিরপেক্ষ এবং এটি সমান ভাবে প্রোটন-প্রোটন, নিউট্রন-নিউট্রন এবং প্রোটন-নিউট্রনের মধ্যে বোসন কনার পারস্পরিক কনার বিনিময়ে কার্যকর হয়। প্রোট্রন ও নিউট্রন উভয়ই কোয়ার্ক নামক আরোও মৌলিক কনিকা দিয়ে গঠিত আরে কোয়ার্ক গ্লুয়ন নামক এক ধরনের আঠালো কনার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে উৎপন্ন তীব্র বলের প্রভাবে একত্রিত থাকে। এর পাল্লা অত্যন্ত কম প্রায় নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধের সমতুল্য। এই বল নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের নিয়ামক। ইলেকট্রনেরম মধ্যে এই ধরনের কোন বল নাই।
দুর্বল নিউক্লিয় বল: যে স্বল্প পাল্লার ও স্বল্প মানের বল নিউক্লিয়াসের মধ্যে মৌলিক কনাগুলোর মধ্যে ক্রিয়া করে অনেক নিউক্লিয়াসে অস্থিতিশীল উদ্ভব ঘটায় তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে। দুর্বল নিউক্লিয় বলের উদ্ভব হয় কোন নিউক্লিয়াস থেকে বিটা রশ্নির নির্গমন ঘটে। বিটা রশ্নির নির্গমনের সময় নিউক্লিয়াস থেকে একটি ইলেকট্রন এবং একটি অনাহিত নিউট্রিনো কনা নির্গত হয়। দুর্বল নিউক্লিয় বল মহাকর্ষবলের ন্যায় এত দুর্বল নয় তবে সবল নিউক্লিয় বল ও তাড়িৎচৌম্বক বলের চেয়ে অনেকটাই দুর্বল। এই বলের পাল্লা অনেক কম প্রায় ১০-১৬ মিটার থেকৈ ১০-১৮ । গেজ বোসন কনার পারস্পরিক কনার বিনিময়ের ফলে এই কনার উদ্ভব হয়। সকল মৌীলক কনার জন্য বাহক কনিকা প্রয়োজন। তাড়িতচৌম্বক বলের জন্য এরকম বাহক কনিকা হচ্ছে ফোটন। সবল নিউক্লিয় বলের জন্য বাহক কনিকা হচ্ছে গ্লু অন। মহাকর্ষ বলের জন্য একটি বাহক কনিকা গ্রাভিটনের প্রস্তাক করা হয়েছে।